মুহাম্মদ মোশারফ হোসাইন
শিক্ষার্থীঃ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া
মহান আল্লাহ তা’য়ালা মানবজাতিকে হেদায়েতের জন্য অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। আর সে দ্বারা শেষ হয় আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মাধ্যমে। পরবর্তীত আল্লাহ তা’য়ালা মানবজাতিকে হেদায়েতের উপর অটল রাখা ও দ্বীনের সকল বিষয়কে সঠিকভাবে অনুধাবন করানোর জন্য যুগে যুগে অসংখ্য জ্ঞানী ও পন্ডিতদেরকে প্রেরন করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন দ্বীনের উজ্জ্বল প্রদীপ হলেন ইমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।
জন্ম বৃত্তান্ত
জ্ঞানের মহান বিশ্বকোষ, দ্বীনের উজ্জ্বল প্রদীপ, আশেকে মুস্তফা,রাসূলে পাকের মো’জেজা সমূহের অন্যতম একটি মো’জেজা, মুজাদ্দেদে দ্বীন ও মিল্লাত ইমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ভারতের ব্রেলী শরীফের জহীরা নামক গ্রামে ১০ই শাওয়াল ১২৭২ হিজরী,১৪জুন ১৮৫৬ খ্রীষ্টাব্দ মোতাবেক রোজ-শনিবার জোহরেরর সময়ে এব সম্ভ্রান্ত বংশে ইমাম আর্বিভূত হন।যা তিনি প্রসিদ্ব আবজাদ হিসাবানুযায়ী পবিত্র কুরআনের সূরা মুজাদালাহ,আয়াত নং-২২ থেকে তার জন্মসাল জ্ঞাপন করেছেন। তার পিতা ছিলেন যুগশ্রেষ্ট মুহাদ্দিস আল্লাম নক্বী আলী খান (রহমতুল্লাহি আলাইহি)।
ইমামের শিক্ষা জীবন
ইমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) শৈশব থেকেই অত্যন্ত প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন। তিনি মাত্র চার বছর বয়সে পবিত্র কুরআনের নাজেরা পাঠ শেষ করেন। পরবর্তীতে তার পিতার বন্ধু মাওলানা গোলাম কাদের বেগ’র নিকট তিনি ইলমে দ্বীনের প্রাথমিক জ্ঞান নাহু,সরফ, উর্দু,ফার্সী ও আরবী ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি তার পিতা যুগশ্রেষ্ট ফকিহ্ আল্লামা নক্বী আলী খান এর নিকট ইলমে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় তথা উলুমে হাদীস, উলুমে ফিকহ্, উলুমে তাফসীর, বালাগাত, মানতিক সহ সকল দ্বীনি বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেন। এমনকি তিনি গনিতশাস্ত্র, দর্শনশাস্ত্রে ও ভূতপত্তি অর্জন করেন। তিনি মাত্র ১৩ বৎসর ১০ মাস ৫দিনের মধ্যে একাডেমিক শিক্ষা শেষ করে দস্তারে ফযীলত হাসেল করেন। পরবর্তীতে তিনি তার পীর সৈয়্যদ আলে রাসূল মারেহারভী’র নিকট শরীয়ত ও তরিক্বতের বিশেষ দীক্ষা লাভ করেন।
ইমামের শৈশবের অসাধারন প্রতিভা
শৈশবকালেও ইমামের অসাধারন প্রতিভার বিকাশ ঘটে। মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি জনসম্মুখে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মিলাদ প্রসঙ্গে “দু” ঘন্টা নূরানী তাকরীর করেন। যখন ৮ বছর বয়সে উপনীত হন তিনি ইলমে দ্বীনের প্রসিদ্ব কিতাব “হেদায়াতুন নাহু” এর আরবী ভাষায় আলোডনসৃষ্টিকারী ব্যখ্যা গ্রন্থ লিখেন। যা ইমামের জ্ঞানের গভীরতা জানান দেয়। এমনকি ইমামের বয়স যখন ৮ বছর তিনি ইলমুল ফরায়েজ সম্পর্কিত জটিল একটি মাসআলা সমাধান করেন যা তার পিতাকে মুগ্ধ করে। আ’লা হযরত যেদিনে দস্তারে ফযীলত গ্রহন করেন সেদিন রাদাআত তথা স্তন্যপান সম্পর্কিত জটিল মাসআলা’র সমাধান দেওয়ার মাধ্যমে ইমামের জ্ঞানের প্রখরতা সকলের নিকট অনুধাবিত হয়।
বায়’য়াত ও খেলাফত
আ’লা হযরত যেমনিভাবে শরীয়তের আলেম ছিলেন তেমনিভাবে তরিকতের শায়খও ছিলেন। একদা তিনি তার পিতা ও অন্য একজন সহ “মারেহেরা শরীফে তাশরীফ নিলেন এবং সেখানকার সাজ্জাদানশীন হযরত সৈয়্যদেনা শাহ আলে রাসূর মারেহারভীর সাথে সাক্ষাত হলো। তিনি আ’লা হযরতকে দেখে বলেন আসুন,আপনার অপেক্ষায় রয়েছি। অতঃপর তিনি ও তার পিতা আলে রাসূলের নিকট বায়’য়াত গ্রহন করেন। ঔই দিনেই আলে রাসূল আ’লা হযরতকে খিলাফত প্রদান করেন। এছাড়াও
জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আ’লা হযরত
পরওয়ানায়ে শাময়ে রিসালত ইমাম আহমদ রেযা খান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন জ্ঞানের সমুদ্র। যা তিনি রাসূলে পাকের করমে অর্জন করেছেন। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সকল বিষয়ে সমানভাবে পারদর্শি ছিলেন। বর্তমান গবেষনা মতে তিনি প্রায় ১০৫ টি বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জনের প্রমান পাওয়া যায়। এবং তিনি ৫৫ টি বিষয়ের উপর বিভিন্ন ভাষায় কিতাব রচনা করেন। যা আজ গোটা মুসলিম উম্মার জন্য আলোকবার্তিতা স্বরুপ ধারন করেছে। ইমাম এমন অনেক বিষয়ে কিতাব রচনা করেছেন যা ইতোঃপূর্বে রচিত হয়নি। ইমামের ৫৫ বিষয়সমূহ ইলমুল কুরআন, ইলমুল হাদিস,উসূলে হাদিস,ফিকাহ্,উসূলে ফিকাহ্,তর্কশাস্ত্র,তাফসির,ইলমে আকাইদ,ইলমে মায়ানী, বাদী,বায়ান,ইলমে নাহু,সরফ,মানতিক্ব,জদল মহায্যর, ইলমে তাবসীর,হাইয়্যাত,হিসাব,হিন্দাসা,মুনাযারা,ফালসাফা,ক্বিরাত,তাজবীদ,তাসাউফ,সুলূক,আখলাক, আসমায়ে রিজাল, সিয়ার,তারিখ,লুগাত,ইলমুল আদাব এসব গভীর পান্ডিত্য অর্জন করেন।এমনকি তিনি এ্যারিসমাতীক্বী,যবর ও মোক্বাবেলাহ,হিসাবে সিত্তানী,লগারিদম,আকর,যীজাত,মুসাল্লাসে কুরভী,হাইয়াতে জাদীদাহ,মুরাব্বাআত,ইলমে জুফর,ইলমে নুজুম সহ আরো অনেক বিষয়ে পারদর্শি ছিলেন।
লিখনীতে আ’লা হযরতের অবদান
আব্দুল মোস্তফা ইমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন লিখনীর দিক থেকে অতুলনীয়। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় ৫৫ টি বিষয়ের উপর ১৪০০ কিতাব রচনা করেছেন। তিনি প্রতিটি বিষয়ের উপর তার কলম ধরেছেন। তাইতো অনেক মনীষীর মতে আইম্মায়ে মুতায়াখ্খেরিনদের মধ্যে আ’লা হযরতের সমতুল্য হওয়ার যোগ্যতা ইমাম সুয়ূতি ব্যতিত অন্য কারো নেই। যেই বিষয়ে কলম ধরেছেন মানুষ তাতে অবাক হয়েছে। তিনি পবিত্র কুরআনের সর্বশ্রেষ্ট অনুবাদ,অসংখ ব্যাখ্যা, হাশিয়াহ,হাদীস গ্রন্থ,হাদীসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ, আকাইদ,ইলমে কালাম, ইলমে ফিকহ তাসাউফ, তারিখ, সিয়ার, আদাব,লোগারসাম,ফালসাফা,মানতিক সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর কলম ধরে শরিয়তকে জীবিত করেছেন। তিনি ফিকহে হানাফি উপর ৩০ খন্ড সম্বলিত ফতোয়াগ্রন্থ “ফতোয়ায়ে রেজভীয়্যাহ “ লিখেন যাতে প্রায় সকল বিষয়ের সমাধান রয়েছে। ইমামের সকল গ্রন্থ আজ বিশ্বব্যাপী অনুসরনীয় এবং শরীয়ত চর্চার বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
না’ত সাহিত্যে আ’লা হযরত
আ’লা হযরত আযিমুল বারকাত ইমাম আহমদ রেযা খান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন একজন প্রকৃত আশেকে রাসুল। তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মুহাব্বত তথা ভালোবাসার গুরুত্ব ও আবশ্যকতা তার কাব্য, লেখনীতে তুলে ধরেছেন।তিনি রাসূলের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে এক অতুলনীয়,অমুল্য না’ত তথা প্রশংসা কাব্যগগ্রন্থ লিখেন। আর তা হলো “হাদায়েকে বখশিশ“।এই না’ত গ্রন্থে সকল না’ত রাসূলের গুনকীর্তন, প্রশংসা নিয়েই পরিপূর্ণ। যাতে ইমাম সকল না’তে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের অর্থ,মমার্থ ও ব্যখ্যার সমন্বয় ঘটিয়েছেন। যেই না’ত গ্রন্থের ব্যাখ্যাও ২৫ খন্ডে বের হয়েছে। আজ ইমামের এই না’ত গ্রন্থ আশেকে রাসূলের অন্তরের খোরাকে পরিনত হয়েছে।
ঈমান-আক্বিদা রক্ষায় আ’লা হযরত
ইমামের সময়ে তৎকালীন ভারতবর্ষে অনেক নামধারি মুসলমান সরলমনা মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা কে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেখেছিল। তারা মুসলমানদের মনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি মন্দ আক্বিদা পোষন করানোর জন্য অনেক ভ্রান্ত আক্বিদা প্রচার করেন। যা কখনো শরিয়ত সম্মত আক্বিদা নয়। তারা রাসূলের জ্ঞান নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, রাসুলের খেয়াল অন্তরে লালন করা শিরিক, আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন, রাসূলের নিকট কোনো ক্ষমতা নেই, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইলমে গায়েবের ধারক নন সহ আরো অনেক ভ্রান্ত আক্বিদা প্রচার করেন। আ’লা হযরত তাদের সকল ভ্রান্ত আক্বিদার বিরুদ্বে কলম ধরে সঠিক আক্বিদা মানুষের নিকট তুলে ধরেন। তিনি তাদের এইসব ভ্রান্ত আক্বিদার দাতভাঙ্গা জবাব দিতে “আল মুতামাদুল মুস্তানাদ,আদদৌলাতুল মাক্কিয়া,আল মনিয়েমুল মুকিম, মুনিরুল আইনান,আল কাওকাবাতুস শিহাবিয়া,আল ফারকুল ওয়াজিস” সহ অসংখ্য কিতাব রচনা করে তাদের জবাব দেন। এমনকি তাদের সকল ভ্রান্ত আক্বিদাকে কেন্দ্র করে আরবের অনেক আলেমের মতামত নিয়ে তিনি তাদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে উম্মতে মুসলিমাকে গোস্তাখানে রাসূল থেকে ঈমান-আক্বিদা সংরক্ষন করেন।
সমাজ সংস্কারে আ’লা হযরত
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’র অবদান সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে আছে। তিনি সমাজে অনেক সংস্কার করেছেন এবং সমাজ থেকে অনেক কুসংস্কার দুরিভূত করেছেন। তিনি সমাজের মানুষকে আল্লাহ তা’য়ালা কতৃক ফরজ ইবাদতসমূহ করার এবং রাসূলের সুন্নাতসমূহ করার প্রতি সর্বদা তাগিদ দিতেন। আবার সমাজের অনেকে ফরজ ব্যতিত মুস্তাহাব ও নফলকে গুরুত্ব দিলে তিনি তাদের এগুলো শরিয়তের দৃষ্টিতে অগ্রহনযোগ্য মনে করেন। সমাজের অনেকে আউলিয়া কেরামের মাজারে যেতেন। কিন্তু অনেকে মাজারে গিয়ে সিজদা করত। তিনি আল্লাহ তায়ালাকে ব্যতিত অন্য কাউকে তাজিমী সিজদা করাকে হারাম বলেছেন। এমনকি এটি হারাম হওয়ার ব্যাপারে তিনি একটি কিতাবও রচনা করেন।আর তা হলো “আযযুবদাতুল যাকিয়্যাজ ফি তাহরিমে সুজুদিত তাহিয়্যাহ”। এভাবে মুসলিম সমাজের ছেলে মেয়েরা তাদের ঘরে বিভিন্ন জীব-জন্তুর ছবি ঘরে টাঙ্গিয়ে রাখা এবং মাটির কিম্বা প্লাষ্টিকের মূর্তি, পুতুল ইত্যাদি ঘরে সাজিয়ে রাখে। আ’লা হযরত এর তীব্র বিরোধিতা ও নাজায়েয বলেন। এমনকি দেখা যায় আমদের সমাজের মহিলারা মাজার শরীফে গমন করেন এবং অনেকে পর্দাহীন যেতেন। আ’লা হযরত এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন এবং তিনি বলেন যে মহিলারা বের হয় তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতা এমনকি কবরবাসীরা লানত দেন। তিনি এ বিষয়ে একটি কিতাবও লেখেন। তা হলো “জামানুল নুর ফি নাহিয়িন আন যিয়ারাতিল কুবুর”। এভাবে সমাজে ছেলেরা বিভিন্ন উপলক্ষে আতশবাজী,ফটকা বাজী ফুটায়। আ’লা হযরত উহাকে হারাম বলেছেন। এভাবে আ’লা হযরত সমাজ থেকে অনেক কুসরংস্কার দূর করেন।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আ’লা হযরত
ইমাম আহমদ রেযা খান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাজনৈতিক ভাবেও একজন সফল ব্যক্তিত্ব। তার রাজনৈতিক সকল চিন্তাধারা কুরআন হাদীসের মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। কোনো সময় অন্যায়ের নিকট মাথা নত করেন নি। তিনি হিন্দুদের রাজনৈতিক সকল কলাকৌশল বুঝছিলেন। গান্ধী ও তার শিষ্যরা চেয়েছিল মুসলমানদেরকে ব্যবহার করে ইংরেজদের তাড়িয়ে দিয়ে তারাই একচচ্ছ রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। আ’লা হযরত তাদের এই ফাঁদ থেকে মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য “দ্বি-জাতি তত্ত্ব” প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। অবশ্য এ দ্বি-জাতি তত্ত্ব তিনি ১৮৯৭ ঈসায়ী পাটনা সুন্নি কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘোষনা দেন। তিনি ঘোষনা দেন হিন্দু তথা যে কোন কাফের শক্তির সাথে মুসলমান কখনো এক হতে পারে না। তিনি “অসহযোগ আন্দোলনে” গান্ধীর কূটনীতিক চালের মুখোস উম্মোচন ও সে সময়ে বিভ্রান্ত মুসলিম রাজনীতিকদের হিন্দু -মুসলিম ঐক্যের কুফল তুলে ধরে ভীষন অসুস্থ অবস্থায় “আল মুহাজ্জাতিল মু’তামিনাহ ফি আয়াতিল মুমতাহিনা ” নামক কিতাব রচনা করেন।এই কিতাব টি মুসলমানদের প্রথম স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং দ্বি-জাতি তত্ত্বের লিখিত দলিল। যার অনেক পরে তা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ধারনায় আসে।এভাবে আ’লা হযরত রাজনৈতিক ভাবে অনেক অবদান রাখেন। তিনি আরো অন্যান্ন কিতাব রচনা করেন যা মুসরমানদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তিনি লেখে যান “আন নাফসুল ফিকরি ফি কোরবানীর বাকরি “ যা তিনি হিন্দুস্থানে গাভী জবেহ নিষিদ্ব করায় এর প্রতিবাদে লেখেন। এভাবে তিনি “এনামুল এনাম বিয়ান্না হিন্দুস্থান দারুল ইসলাম, তাদবীরি ফালাহ ওয়ানাজাত ওয়া ইছলাহ, দাওয়ামুল আরশি ফি আইম্মাতি কুরাইশি “ সহ আরো কিতাব রচনা করে রাজনৈতিক আন্দোলন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সোচ্চার ছিলেন।
মুজাদ্দেদ তথা সংস্কারক হিসেবে আ’লা হযরত
মহান আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হেদায়েত ও দ্বীনের সংস্কারের জন্য প্রতি শতকে একজন সংস্কারক প্রেরন করেন। যা পবিত্র হাদিসে পাকে বর্ণিত আছে। মুজাদ্দিদের সকল গুণাবলি আ’লা হযরতের নিকট বিদ্যমান। যিনি মুজাদ্দেদ হবেন তিনি পরিপূর্ণ দ্বীনের বাহ্যিক ও আধ্যাতিক জ্ঞানের আলোম হবেন। সুন্নাতের সাহায্যকারী ও বিদায়াত, কুসংস্কার দূর করবেন। যা আ’লা হযরতের মধ্যে পরিপূর্নরুপে বিদ্যমান। তিনি সহস্রাধিক কিতাব লেখে তার জ্ঞান ও সংস্কারের সকল প্রমান রেখেছেন। তিনি সমাজ থেকে সকল কুসংস্কার,রাষ্ট্রের প্রতি সকল দায়িত্ব পালন এবং দ্বীনের সঠিক রুপরেখা উম্মতে মুসলিমার নিকট তুলে ধরেন। তার তাজদীদে কর্ম সকল স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্যই আরব-আজমের সকলে আ’লা হযরতকে একবাক্যে মুজাদ্দেদ তথা সংস্কারক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। তিনিই হলেন শতাব্দীর ধারাবাহিকতায় চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দেদ।
ব্রিটিশ বিরোধি হিসেবে আ’লা হযরত
আ’লা হযরত সর্বদা ব্রিটিশদের বিরোধি ছিলেন।তিনি তাদের সরকার, বিচার বিভিগ সকল বিষয়ের প্রতি তীব্র বিরোধিতা করেন। ইংরেজরা ব্যবসার উদ্দেশ্যে এসে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করায় তিনি বলেন “হে ঘুমন্ত! জেগে ওঠো, চোরেরাই পাহারা দিচ্ছে”। তিনি তাদের বিচারালয়ে বিচারের শরনাপন্ন হওয়াকে অর্থনৈতিক অপচয় বলে ঘোষনা দেন। তিনি ব্রিটিশদের জন্য “সরকার “শব্দ ব্যবহার করাকে প্রয়োজনবোধ মনে করতেন না। তিনি ইংরেজ বিচারালয়কে আদালত ও বিচারককে “আদেল” বলা নিষিদ্ব। করেন। শুধু তাই নয় বিচারককে “আদেল” বলে বিশ্বাস করা কুফুরি ফতোয়া দেন। ইমামের নামে যখন মামলা করা হয় তখন তিনি বলেন আহমদ রেযা না,আহমদ রেযার জুতাও ইংরেজদের কোর্টে যাবে না। এমনকি তিনি চিঠির খামে ইংরেজ রাণীর ছবি উল্টো লাগিয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরোধদিতা করেন। এভাবে আ’লা হযরত ব্রিটিশদের সর্বদা বিরোধিতা করে যান।
আ’লা হযরতের ওফাত শরীফ
ইমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যুর পূর্বে তিনি অছিয়ত নামা লেখালেন এবং তাতে স্বাক্ষর করেন।দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পূর্বে যে সমস্ত দোয়া পাঠ করা সুন্নাত তিনি সবগুলো পরিপূর্ণভাবে পড়লেন। অতঃপর ২৫শে সফর ১৩৪০হিজরী মোতাবেক ২৮ অক্টোবর ১৯২১ সালে জুমা মোবারকের দিনে ঠিক ২টা ৩৮ মিনিটে দুনিয়া ত্যাগ করে রাসূলের দীদারে সাড়া দিলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন)। ইমামের গোসল ও দাফন শরীফে সকল ওলামায়ে কেরাম অংশগ্রহন করেন। ইমামের জানাযা সম্পন্ন করেন শাহজাদায়ে আ’লা হযরত মুফতিয়ে আজম মাওলানা আমজাদ আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) পড়ান।

